অল্প খরচে ভালো ফলন আবার দামও বেশি, তাই কলা চাষে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কলা চাষিরা। তাদের অনেকেই চাষের সঙ্গে সঙ্গে কলার খুচরা ব্যবসা করেও উন্নতি লাভ করেছেন। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বিঘার পর বিঘা এবং বাড়ির আশপাশ, ডোবা, নালা, জমির আইলে বিভিন্ন জাতের সবরি, চিনি চাম্পা, বিচি কলা ও সাগর কলার গাছ লাগানো রয়েছে। কলার বাগান চাষিরা গত শীত মৌসুমে জমিতে গোবর, ইউরিয়া, পটাশ, ফসফেট সার মিশিয়ে জমি তৈরি করছেন। তাতে তিন হাত ফাঁকা ফাঁকা করে কলার চারা লাগিয়েছেন। ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যে প্রতিটি গাছে কলার মোচা এসেছে। ১২ মাসে মধ্যে তা বাজারজাত করার উপযোগী হয়ে উঠেছে।
এক বিঘা জমিতে কলা চাষ করতে খরচ হয় চাষির ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। বিঘাতে প্রায় ৩৫০ থেকে ৩৭০টি গাছ লাগানো যায় এবং প্রতিটি গাছে কলার ছড়া (ঘাউড়) ধরে। কলাচাষি বড় ছড়া বিক্রি করছেন বর্তমান ৫০০ টাকা, মাজারি ছড়া ৪০০ টাকা এবং ছোটটা করছেন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করে একজন বাগান মালিক কলা বিক্রি করছেন ২ লাখ থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রথম চালান কলা কাটার পর গাছটি কেটে ফেলেন। সেই কাটা গাছের গোড়া থেকে আবারও কুশি বের হয়ে থাকে। সেই কুশি থেকে আবার দ্বিতীয় চালান কলা ধরে। এভাবে একজন কলাচাষি বাগান থেকে দুইবার কলা বাজারজাত করেন। তবে দ্বিতীয়বারে কলার আকার অনেকটা ছোট আকৃতির হয়।
কথা হয় বিরামপুর উপজেলার শারামপুর গ্রামের কলা চাষি ফতু মিয়ার সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, প্রতি বছর আমি কলার চাষ করি। এবছরও দুই বিঘা জমিতে কলার চাষ করেছি। গত রমজান মাসে প্রথম চালান কলা বাজারজাত করেছি। দামও পেয়েছি অনেক বেশি। এখন দ্বিতীয় চালানের কুশি বড় হচ্ছে, তা শীত মৌসুমে কাটতে পারবো। আল্লাহ দিলে কলার চাষ করে নিজেকে স্বাবলম্বী করতে পেরেছি।
টেগরা গ্রামের কলা চাষি বাবুল আক্তার বলেন, দেড় বিঘা জমিতে সবরি কলার বাগান করেছি। এটা আমার নতুন বাগান। প্রতিটি গাছে কলা ভালো হয়েছে। গত সপ্তাহ থেকে কলা কাটতে শুরু করেছি। বড় ছড়াগুলো ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করছি, মাঝারিগুলো ৪০০ এবং ছোটগুলো ৩০০ টাকায় বিক্রি করছি।
কলা ব্যবসায়ী হানিফ শাহ বলেন, আমি ৩৫ বছর যাবত এই কলার ব্যবসা করি। বর্তমানে সবরি কলা বড়টা বিক্রি করছি ৩০ টাকা হালি, মাঝারিটা ২০ থেকে ২২ টাকা এবং চিনি চাম্পা ৬ থেকে ৮ টাকা হালি বিক্রি করছি। আমি গ্রামে গিয়ে কলা চাষিদের কাছ থেকে বাগান কিনছি। এক বিঘা জমির কলার বাগান কিনেছি ২ লাখ থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দরে।
তিনি আরও বলেন, আমার এক সময় কিছুই ছিল না, এই কলার ব্যবসা করে সব করেছি। আমার দুই মেয়ে দুই ছেলে, দুই মেয়ে আর এক ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানিয়েছি। ছেলে সরকারি, সহকারী প্রকৌশলী কর্মকর্তা হয়েছেন। ব্যবসা করেই আমি আমার এই সম্পদগুলো তৈরি করেছি। এখন আমার আর কোনো টেনশন নেই, ছেলে চাকরি করেন। বিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার নিক্সন চন্দ্র পাল বলেন, কলার দাম ভালো পাওয়ায় গতবারের চেয়ে এবার কলার বাগান উপজেলায় বৃদ্ধি পেয়েছে। গতবার ১০ হেক্টর জমিতে কলার চাষ হয়েছিল। এবার কৃষকরা ১৫ হেক্টর জমিতে কলার বাগান করেছে। চলতি কলার মৌসুমে কলাতে তেমন কোনো রোগবালাই নেই। আমিসহ কৃষি কর্মচারীরা প্রতিটি কলার বাগান পরিদর্শন করছি।